লেখক – অশোক ভট্টাচার্য( রাজা), কংগ্রেস মুখপাত্র
১৭ অক্টোবর চলে গেলেন দেবরাজ রায়। নামটা বললে পরিচয়ের ব্যাখ্যা পড়ে না। সাদা-কালোর যুগে নিয়ম করে যারা খবর দেখতেন তাঁরা ওনার কন্ঠস্বরের সঙ্গে ছিলেন একাত্ম। কলকাতা দূরদর্শনের সরকারি সংবাদ পাঠক শুধু নন, প্রতিভার মাপকাঠিতে ঠাঁই পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রে।
গত শতকের নয়ের দশকের শুরুতে প্রবল বাম আমলে যখন বাংলার পাল্টিবাজ বুদ্ধিজীবিরা, এমনকি পাতের অযোগ্য শিল্পীরাও বামফ্রন্টের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। দেবরাজ রায় ভেসে যাননি শাসকের চোরাস্রোতে।সেই দেবরাজ রায় সক্রিয় কংগ্রেস করতেন! নির্বেদ রায় তখন প্রদেশ কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান, অমিতাভ সিনহা তখন সাংস্কৃতিক বিভাগের সাধারণ সম্পাদক। দেবরাজ রায় ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সাংস্কৃতিক বিভাগের সদস্য।

এই না ভেসে যাওয়া তালিকায় ছিলেন দেবরাজ রায়ের বাবা তরুণ রায়ও। থিয়েটার মহলে যিনি ধনঞ্জয় বৈরাগী বলে পরিচিত। সক্রিয় কংগ্রেস রাজনীতির আদর্শে মানুষ, কোলকাতা কর্পোরেশনে কংগ্রেসের অল্ডারম্যান ছিলেন। ১৯৮৩ সালে কংগ্রেসের কোলকাতার এ আই সি সি অধিবেশনের সাংস্কৃতিক উপসমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন তরুণ রায়। এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতে হয়েছিলো তার সাংস্কৃতিক জীবনে।
আজকের যে ‘অন্তরঙ্গ থিয়েটার'( Intimate theatre). – এর ধারণা তা অনেক আগেই এই বাংলায় শুরু হয়েছিলো তরুণ রায়ের উদ্যোগে পদ্মপুকুরের বাড়িতেই ছোট অডিটোরিয়ামে। ছোড়দা মানে সোমেন মিত্র সেখানে একবার আবৃত্তিও করেছিলেন। বাংলা থিয়েটারের আলোচনায় তরুণ রায়ের এই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেওয়াই হয়নি।
স্রেফ সক্রিয় কংগ্রেস করার অপরাধে বাংলা থিয়েটার মহলের ইন্দ্র – মিত্র – বরুণ হতে পারেননি তরুণ রায়। ফোকাসের স্পট লাইট তাঁর উপর পড়তে দেওয়া হয়নি কখনো।