Ekhon Bangla

বিচার কেন চাইবে?

কলমে – সুবল সরদার (অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্ট অফিসার )

জুনিয়র ডাক্তার অনিকেতকে বলবো হাঙ্গার স্ট্রাইক ত্যাগ করে চিকিৎসা পরিষেবায় ফিরে এসো। তোমার এবং তোমার সহকর্মীদের সৎ ,নির্ভিক প্রতিবাদী মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাই। তোমাদের আমরণ অনশনে সরকারের কোনো মাথা ব্যথার কারণ আছে বলে সরকার মনে করে না । বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম ‘অগ্নিবীণা’ লেখার জন্যে রাজরোষে জেলে গিয়েছেলন। ব্রিটিশদের অপসাশন,অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি জেলে হাঙ্গার স্ট্রাইক করেছিলেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে হাঙ্গার স্ট্রাইক প্রত্যাহার করে সাহিত্য জগতে ফিরে আসতে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বিদেশী শাসকদের কোন মাথা ব্যাথা নেই তাঁর ওই হাঙ্গার স্ট্রাইকে । আমাদের কলকাতা শহর প্রতিবাদের শহর ন্যায় বিচার জন্যে প্রতিবাদ হবে খুব স্বাভাবিক। একজন জুনিয়র ডাক্তার তাঁর কর্মস্থলে খুন ,ধর্ষণ তারপর আবার ধর্ষণ হয় যা বিরলতমের বিরল ঘটনা। পৈচাশিক -নৃশংসতায়- নিষ্ঠুরতায় অভিধানে নতুন সংঙ্গা নির্ধারিত হবে । সিবিআই কলকাতার পুলিশের অনেক পিছনে থেকে তদন্ত করে যাচ্ছে যেমন সুপ্রীম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের থেকে আরো বেশি ডিলেটরি প্রসেস অবলম্বন করছে । অতএব অভয়ার বিচার এখন বড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে। জুনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে শিরদাঁড়া উপহার পেয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ ত্যাগ করে প্রমোশন পান। আমি বলবো সিবিআইকে আপনারা আর একটা শিরদাঁড়া উপহার দিন যাতে সিবিআই প্রধান দ্রুত প্রমোশন পান।

অভয়ার বিচার চেয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। তারা কেউ উৎসবে না ফিরে মহালয়ার পরিবর্তে অভয়ালয়া পালন করছে ,কেউ কেউ অভয়ার অশৌচ পালন করছে। প্রতিবাদের ভাষা পৃথিবীর সব লোক শুনতে পাচ্ছে, শুধু শুনতে পাচ্ছে না বর্তমান সরকার । প্রতিবাদ করলেই থানায় পি সি টানতে হবে পিসির নিদানে । সরকারের কাছে এসব খুন ,ধর্ষণ কিচ্ছু নয় । ব্রিটিশদের থেকে আরো বেশী নিষ্ঠুর। এখানে নিরপেক্ষ তদন্ত না করে সরকার অন্যায় ঢাকতে প্রতি পদে পদে নিয়ম ভাঙছে , অভয়ার মৃত্যু থেকে এখনো পর্যন্ত। একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ‌ । বাংলাদেশের মতো জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম হয়েছে যা ২১ শে আইনের মতো সব সর্বনেশে।

এখন এখানে সুনীতি মানে দুর্নীতি ,শাসন মানে অপশাসন, বুদ্ধি মানে দুর্বুদ্ধ,বাদ মানে শোষণবাদ, রাজ্য মানে নৈরাজ্য । রাজ্যে সুস্থতার কোন লক্ষন নেই অসুস্থতায় ভরা শুধু বিশৃঙ্খলা- দম আটকানো ভয়ের পরিবেশ। ফরিয়াদীরা অভয়ার প্রতিবাদে জেল খাটে আর অপরাধীরা ফরিয়াদী সেজে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়ায়। সরকার মনে করে ফরিয়াদীরা বিচার কেন চাইবে? এখানে খুন ,ধর্ষণ শেষ কথা, বিচার শেষ কথা নয়। বিচারের সমস্ত দুয়ার এখন অবরুদ্ধ। শান্তনার ভাষা একমাত্র চোখের জল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *