Ekhon Bangla

দানার অশনি সংকেত

রণবীর মুখোপাধ্যায় — পুনরায় ‘দানা’ আমফানের মত দানা না বাঁধতে পারে তার জন্যে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বুধবার থেকে শনিবার রাজ্যের ৯টি জেলার স্কুল ও কলেজে পঠনপাঠন বন্ধ থাকছে। পাশাপাশি পুরসভা ও পঞ্চায়েত থেকে এলাকাজুড়ে মাইকিং করে চলছে সতর্কতা। এমনকি ২৩ থেকে ২৫ তারিখ নিজের রাজ্যে ১৪টি জেলাতে সব স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওড়িশা সরকারও।

২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ অক্টোবর কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ ৯ জেলার সব স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকছে ঘোষণা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিশেষ দরকার ছাড়া বাইরে বেরতে নিষেধ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বুধবার থেকেই কন্ট্রোল রুম খুলছে লালবাজার। প্রস্তুত রয়েছে নবান্ন, কলকাতা পুলিশ, কলকাতা পুরনিগম।

পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানার আশঙ্কায় শিয়ালদহ শাখার ১৬০টি ট্রেন বাতিল। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পরিষেবা। পূর্ব রেলের হাওড়া বিভাগেও একাধিক ট্রেন বাতিল হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে একাধিক হাওড়া-ব্যান্ডেল লোকাল, ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল বাতিল করা হয়েছে। বুধবার বাতিল হয়েছে শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস, সেকেন্দ্রাবাদ-হাওড়া ফলকনুমা এক্সপ্রেস, পুরী-জয়নগর এক্সপ্রেস-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন। বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয়েছে কলকাতা-পুরী স্পেশ্যাল এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ ফলকনমা এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেস। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ থেকে যারা পুরীতে বেড়াতে গিয়েছেন তাদের হোটেল ছেড়ে দেবার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলার প্রশাসন। তাদের ফেরার বিষয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্য সচিব।

ইস্ট-কোস্ট রেলওয়ের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বুধবার থেকে বিভিন্ন ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। বাতিল করা হয়েছে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারের একগুচ্ছ ট্রেন। তালিকায় রয়েছে হাওড়া-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস, শালিমার-পুরী সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস, নয়াদিল্লি-ভুবনেশ্বর এক্সপ্রেস, হাওড়া-ভুবনেশ্বর এক্সপ্রেস, হাওড়া-পুরী সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস, নয়াদিল্লি-পুরী এক্সপ্রেস, খড়গপুর-খোর্ধা এক্সপ্রেস, সম্বলপুর-পুরী এক্সপ্রেস এবং রৌরকেল্লা-ভুবনেশ্বর এক্সপ্রেস। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে ২৪ ও‌ ২৫ তারিখ বহু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করেছে। বাতিলের তালিকায় রয়েছে হাওড়া থেকে দিঘা যাবার লোকাল ট্রেনও।

কলকাতা বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে জানা গেছে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা স্বরূপ পরিষেবা আংশিক ব্যাহত থাকছে। বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বিমান চলাচল।

আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র প্রভাবে ২৪ ও ২৫ তারিখ দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টি, অর্থাৎ ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। পাশাপাশি ২৪ তারিখ সন্ধ্যে থেকে এই তিন জেলার উপকূল ভাগে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সর্তকতা থাকছে। কলকাতা,হাওড়া ও হুগলির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০, সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া বইতে পারে। শক্তি বাড়িয়ে দানা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।কমলা বৃষ্টির সতর্কতা জারি কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনাতে। আবহবিদ ডঃ সুজীব কর জানিয়েছেন “ঘূর্ণিঝড় দানা উত্তর আন্দামান সাগরের উপর বিকশিত হয়েছে এবং এটির ঘূর্ণন শুরু করেছে। সিস্টেমটি ২৫ অক্টোবর সকালে চিল্কা এবং বালাসোর উপকূলীয় অঞ্চলের উত্তরে ল্যান্ডফল করতে পারে।

প্রসঙ্গত ‘দানা’ ঘূর্ণিঝড়টি নাম দিয়েছে কাতার। আরবি ভাষায় যার অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তো’। ইংরেজি বর্ণমালা কিউ, এক্স, ওয়াই ও জেড-এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর যদি ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়, তবে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনে ঝড়ের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা ও সতর্কতা প্রদান করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *