Ekhon Bangla

অনলাইন প্রতারণায় কোম্পানির একজিকিউটিভরা জড়িত- কৌশিক বসু, সাব ইন্সপেক্টর, রাজ্য পুলিশ

বর্তমানের এই ডিজিটাল সময়ে সাইবার ক্রাইম বিভিন্ন ভাবে বেড়ে চলেছে। ফ্রড স্টাররা এই সাইবার ক্রাইম কে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে এরা সাধারণ অসাধারণ সব ধরনের মানুষকে সময়োপযোগী বার্তার মাধ্যমে ফ্রড করে চলেছে। যারা স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করেন, নেট ব্যাবহার করেন, তারাই এর শিকার। কিন্তু যারা ক্যাবলা ফোন ব্যাবহার করেন তারা তো সেই ফোনে নেট ব্যাবহার করতে পারেন না তাই তারা কিন্তু এই ফ্রডস্টার দের শিকার নন।

কেউ কি এটা ভেবে দেখেছেন কেন এই স্মার্টফোন ব্যবহার কারীরাই শুধু প্রতারিত হচ্ছেন৷ কারন হচ্ছে এই স্মার্টফোন এবং তাতে নেট সংযোগ থাকার জন্য ফ্রডস্টার রা আপনার ভুলের কারনে, আপনার ব্যাক্তিগত জিনিষের মধ্যে এক্সেস পাচ্ছে। তাই তারা সহজেই আপনাকে প্রতারিত করার সুযোগ পাচ্ছে। এই এক্সেস যদি বন্ধ করতে পারেন তাহলে প্রতারিত হওয়ার ভয় নেই। অনেকেই প্রতারকদের দ্বারা পুরনো স্টাইলে প্রতারিত হওয়ার খবর জানেন। সেই বিষয়ে সাবধানও থাকেন তাই নতুন করে সে সব বিষয়ে কিছু বলছি না। যেমন ব্যাংক ম্যানেজার সেজে বা ইলেক্ট্রিক অফিসের অফিসার সেজে ফোন করে ওটিপি নিয়ে প্রতারিত করার খবর এখন সকলেরই জানা।


এছাড়াও ফেসবুকে দেখবেন বিভিন্ন কোম্পানি খুব সহজেই লোন দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। জানবেন এটাও কিন্তু একটা ট্র‍্যাপ আপনাকে ফ্রড করার জন্য। লোনের এপ্লাই এর জন্য ক্লিক করলেই আপনি ফ্রডস্টার দের সারভিলেন্সে ঢুকে পড়লেন। একবার ভাবুন পাশের বাড়ির লোক বা নিজের বন্ধুরাই কেউই কি খুব সহজে টাকা ধার দিতে চায়। তাহলে অপরিচিত কোম্পানি বা ব্যাক্তি কি স্বার্থে আপনাকে টাকা ধার দেবে? তাই লোভ থেকে দূরে থাকুন। অন লাইন গেমিংও কিন্তু একটা ফাঁদ। এই গেমিং কোম্পানি প্রথমে আপনার থেকে ৫০ বা ১০০ টাকা তাদের ওয়ালেটে নিয়ে আপনাকে দু’ তিন বার জেতাবে এবং ওই টাকা যখনই ওয়ালেট থেকে বার করতে যাবেন তখন আরও বড় অফার দেবে। আরও বেশি টাকা ওয়ালেটে এড করে বড় গেম খেলার জন্য।যেই মাত্র আপনি টাকা এড করবেন, তারপর আপনাকে দেওয়া ওই আইডি ডিএক্টিভেট হয়ে যাবে। ওয়ালেট থেকে টাকা আপনি তুলতে পারবেন না কোনও দিনই।

তাই, প্রথমেই লোভ পরিহার করুন। বাইরের থেকে কোনও সন্দেহপ্রবন লিংক আসলে সেটা ডিলিট করে দিন। অথবা নেট অফ করে সেটাকে কপি করে গুগুলে গিয়ে দেখে নিন সেটা কিসের লিংক। কিন্তু, এগুলো সব পুরোনো হয়ে গেছে, তাই প্রতারকরা অন্য নানা রকম নতুন ফন্দি ফিকির করছে ঠকানোর জন্য।

অন লাইন লটারি তে লাখপতি বা অন লাইন সেক্স এর প্রতারণা এখন বহুল পরিচিত। কিন্তু, লজ্জায় সমাজের অধিকাংশ লোক সেগুলি জানাতে পারেন না। এগুলি ও এখন পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। তাহলে নতুন কি??

হ্যাঁ, এখন নতুন স্টাইল এবং মারাত্মক আপডেট সেই স্টাইল যেটাতে আপনি নিজে ও জানতে পারবেন না যে কি ভাবে ওটিপি না দেওয়া স্বত্বেও ব্যাংক থেকে টাকা বেরিয়ে গেল। এবার সেই স্টাইল টা শুনুন।

হয়তো আপনি যে কোন কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেছেন। আপনার কোন সমস্যা জানাতে। হটাৎ ফোনটা কেটে গেল এবং তার দু তিন মিনিট পরেই একটা নম্বর থেকে আপনার নম্বরে ফোন আসলো কাস্টমার কেয়ারের এক্সিকিউটিভের। আপনি ফোন ধরলেন ওপার থেকে ফোনে খুব মিষ্টি করে দুঃখ প্রকাশ করা হল ফোন কেটে যাওয়ার জন্য। আপনি তারপর আপনার সমস্যার কথা জানালেন এক্সিকিউটিভকে। ওপার থেকে বলা হল কোনও চিন্তা করবেন না, আমাদের তরফ থেকে একটা লিংক পাঠানো হচ্ছে সেটা তে ক্লিক করলে আপনার সমস্যা দু’ তিন দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে ।

আপনার ফোনে লিংক আসলো। আপনি ক্লিক করলেন। আপনি জানেন দুই তিন দিন পর আপনার সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু, দুই তিন দিন পরেই আপনি হঠাৎ মেসেজ পেলেন আপনার ব্যাংক থেকে সব টাকা বেরিয়ে অন্য রাজ্যের কোনও একটা একাউন্টে চলে গিয়েছে। না কোনও ওটিপি কেউ জানতে চায়নি বা কেউ আপনার ক্রেডিট কার্ড এর নম্বরও জানতে চাইনি। তাহলে কিভাবে এই রকম হল?

আসলে এর রহস্য লুকিয়ে আছে ওই লিংক এর মধ্যেই। যেই মাত্র আপনি লিংকটাতে ক্লিক করেছেন অমনি আপনার ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার অজান্তেই এনিডেস্ক বা টিমভিউয়ারের মত রিমোট এক্সেস অ্যাপ ইন্সটল হয়ে গিয়েছে। আর আপনি ফ্রডস্টারদের সারভিলিন্সে চলে গিয়েছেন। এই দুদিনে আপনি আপনার ফোন পে অথবা গুগুল পে দিয়ে যা যা করেছেন বা যা যা পাসওয়ার্ড দিয়েছেন বা পিন নম্বর দিয়েছেন ফ্রডস্টার রা সমস্ত কিছু দেখেছে। তারপর সুযোগ মত আপনার একাউন্ট ফাকা করে দিয়েছে।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে আপনি কাস্টমার কেয়ারে ফোন করার পর পরেই ফ্রডস্টাররা জানলো কিভাবে যে আপনি কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেছিলেন। তাহলে জেনে রাখুন প্রথমে কাস্টমার কেয়ারের যে আসল এক্সিকিউটিভ এর সাথে আপনি কথা বলেছিলেন সেই এক্সিকিউটিভ আপনার ফোনটা ইচ্ছে করে কেটে দিয়ে আপনার নম্বরটা ফ্রডস্টারদের দিয়ে দিয়েছে। ঝাড়খন্ডের এক কাস্টমার কেয়ারের এক্সিকিউটিভ এই জঘন্য কাজের জন্য গ্রেফতারও হয়েছে। আইনি বাধার জন্য কোম্পানির নামটা লিখলাম না। জেনে রাখবেন, লোভ ভয় আর অচেনা লিংক যদি এড়িয়ে যেতে পারেন, তাহলে আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

আপনার নিজের ঘরের দরজা যদি আপনি খুলে দেন বা খুলে রাখেন তবেই কিন্তু কেউ আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারবে, নচেত নয়।

(সবার সচেতনার উদ্দেশ্যে নিয়েই এই লেখা। বক্তব্য সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *